بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ

السلام عليكم ورحمة الله و بركاته

আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে আইসিডির শেখেরটেক কমিউনিটি। কয়েকজন ভাই আছেন অফিসে যাতায়াত বাবদ দিনে কমপক্ষে ৩ ঘন্টা রাস্তায় ব্যায় করেন, তবু শেখেরটেকেই পড়ে আছেন। কেউ কেউ নিজের ফ্লাট/বাড়ী ছেড়েও শেখেরটেকে ভাড়া বাসায় থাকছেন। এরকম ছোট বড় আরও অনেক ত্যাগ স্বীকারের কাহীনি লুকিয়ে আছে ঢাকা শহরের এক প্রান্তে পড়ে থাকা শে‍‍‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌খেরটেকের আইসিডি কমিউনিটির অনেক পরিবারের মাঝেই।কিন্তু কেন আছেন, তার ব্যাখ্যা হয়ত জনে জনে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু মোটা দাগে একটা দ্বীনি কমিউনিটির কিছু বিষয়তো তো রয়েছেই, যা শ্রোতের প্রতিকূলে ঈমান নিয়ে বেঁচে থাকার আপ্রাণ প্রচেষ্টায় রত মুসলিম ভাইবোনদের কিছুটা তো প্রভাবিত করেই। আমাদের কাছে মাঝে মাঝেই এ বিষয়গুলি নিয়ে কিছু প্রশ্ন আসে – তাই চার বছর ধরে এই কমিউনিটিতে থাকার সুবাদে কল্যান লাভের যে সুযোগগুলি আমার সামনে এসেছিল তার কিছু এই কমিউনিটির ভার্চুয়াল সদস্যদের সাথে শেয়ার করছি যা হয়ত তাদেরকে যেকোন ভাল একটি দ্বীনি কমিউনিটিতে যুক্ত হবার বা তা গঠন করবার প্রেরণা জোগাতে পারে –

১. সন্তানদের সঙ্গ – একজন মুসলিমের জন্য তার সঙ্গী/বন্ধু কতখানি গুরুত্বপুর্ণ তা হয়ত এই গ্রুপের ভাই বোনদের বুঝাতে হবে না। রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন,

“একজন মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়ে থাকে। সুতরাং সে যেনো লক্ষ্য রাখে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে।” [তিরমিজিঃ ২৩৭৮, হাসান-সহীহ]

এখানে আসার আগে এই বিষয়টি নিয়েই সবচেয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। কারণ আমরা সন্তানদেরকে যতই গেজেট, ডিস বা ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করি, তাতে খুব বেশি লাভ নাও হতে পারে, যদি তার সাথী-সঙ্গীরা একই মনভাবের না হয়। দু-একদিন তার কাজিনদের সাথে মিশলেই তো আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল বা আইপিএল-বিপিএলের ভূত নামাতে বেশ কষ্ট হয়। সেখানে তার প্রতিদিনের খেলার সাথীরা বা স্কুলের বন্ধুরা যদি ডিস এবং ইন্টারনেটের বাসিন্দা হয়ে থাকে তাহলে বাবা-মায়ের তাত্ত্বিক ইনপুট আর কদিন কাজ করবে?

এদিক থেকে এই কমিউনিটিকে আলহামদুলিল্লাহ আমি বেশ ভাল পেয়েছি। এখানে এসসিডি স্কুলে এই গেজেট, ইন্টারনেট এবং টিভি থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত রাখার জন্য যত ধরণের আয়োজন করা হয়, অন্য কোথাও তেমনটি দেখার বা জানার সুযোগ আমার হয়নি। আবার এখানে স্কুলেরই একটা ছোট্ট মাঠ থাকায় সন্তানদের পড়ার সাথীর পাশাপাশি খেলার সাথী নির্বাচনেও খুব একটা সমস্যা হয় না, আলহামদুলিল্লাহ। পাশাপাশি মাঠে শারীরিক কসরত সহ খেলার সুযোগ একটা বোনাসই বটে। কারণ এটা বাড়ন্ত শারীরটিকে ফিট রাখার জন্য যেমন জরুরী তেমনি তাদেরকে স্ক্রীন থেকে দূরে রাখার খুব ভাল একটি সহয়াহকও বটে।

আইসিডির দ্বীনি ভাইদের সন্তানেরাই যখন তাদের খেলা ও পড়ার সাথী, তাই তাদের অপরিপক্ক অথচ নিষ্কলুষ ও দূষণমুক্ত মস্তিস্কে দুষিত ধারণা, বিশ্বাস বা কালচার অনুপ্রবেশের সম্ভবনা কিছুটা হলেও কমে যায়। তাই তো এই কমিউনিটির অনেক দ্বীনি ভাইদের বাচ্চাদের ব্যাপারে শুনি মিউজিক বাজে এমন দোকানে/মার্কেটে প্রবেশ করতে চায়না অথবা কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয়, বাচ্চা ছেলেরা পায়ের গিরার নিচে কাপড় গেলে অস্বস্থি অনুভব করে, বাচ্চা মেয়েরা বোরকা কেনার আবদার করে, বাচ্চারা প্রতিযোগীতা করে কুরআন/দোয়া মুখস্ত করে, বাবা মা কোন সুন্নাহ ভুলে স্বরণ করিয়ে দেয়….এরকম আরও কত অদ্ভুদ ধরনের কান্ড যা এ সেকুলার সমাজে হয়ত বড়ই বেমানান।

পাশাপাশি বাচ্চাদের তারবিয়াতের জন্য এসসিডি স্কুলের সাপ্তাহিক হালাকাগুলো এবং বাবা-মায়েদের জন্য বিশেষ হালাকাগুলোও বেশ ভুমিকা রাখে, আলহামদুলিল্লাহ। কারণ বাচ্চাদের দিকে খেয়াল করলে আমরা দেখতে পাই, সে বই পুস্তক বা নসিহা থেকে যা শেখে তার থেকে অনেক বেশি শেখে পরিবেশ থেকে যা আমরা সচারচর নোটিস করতে পারি না। এই পরিবেশটা ভাল হলে সে ভাল ভাল জিনিস শেখে, আর খারাপ (সেকুলার, দুনিয়ামুখি বা যেকোন মন্দ বিষয়…) হলে তার মধ্যে সেটাই আস্তে আস্তে বসে যায়। বড়রাও এর ব্যাতিক্রম নন।

সর্বোপরি একটি দ্বীনি কমিউনিটির স্কুল একটা ৩৬০ ডিগ্রী ভুমিকা রাখে যার বেশিরভাগ ভুমিকাই আমাদের চোখের অগোচরে ঘটে থাকে এবং তা উপলব্ধি করা যায় কেবল পরিবেশ পরিবর্তন হলে তাও একটি উল্লেখযোগ্য সময় পর।

২. দ্বীন বোনদের জন্য একটি পরিবেশ: জীবনে সঠিক ইসলাম ধারণ করতে যেয়ে মুসলিম সমাজেই সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়া দ্বীনি ভায়েরা মাঝে মাঝে দূর দূরান্তে গিয়ে হলেও কিছুটা দ্বীনি পরিবেশের স্বাদ বা সামান্য কিছু উপকারীতা পেতে পারেন। কিন্তু বোনদের ক্ষেত্রে তা হয়ত সম্ভব হয় না, অথচ তাদের বিরুদ্ধেই চক্রান্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি অথবা এভাবে বলা যায়, যে পথগুলোতে শত্রুরা মুসলিমদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে বা করছে, মুসলিম বোনদের বিরুদ্ধে তাদের চক্রান্ত সেগুলির মধ্যে অন্যতম। আজকাল শুধু মিডিয়া নয় বরং বোরকা বা হিজাবের মধ্যেও ফিতনাহ ঢুকিয়ে দিয়েছে তারা। যা হোক এ কমিউনিটিতে আসার আগে মহিলাদের বিষয়গুলো শুধু তাত্ত্বিক মনে হতো, কারণ বাসায় কুরআন-সুন্নাহর সহীহ গ্রন্থ থাকলেও ছিলনা কোন বাস্তব উদাহরণ। পাশাপাশি প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রচন্ড দুনিয়ামুখী কালচারের প্রতাপে সপ্তাহে একদিন জুম্মার খুতবাহ থেকে নিয়ে আসা চার্যগুলো ‌খুব অল্পসময়েই ফুরিয়ে যেত। বাকিটা সময় কর্তৃত্ব করতো ‍দুনিয়াদারির মুষিক-দৌড়ের প্রসঙ্গ। গীবত, পরচর্চা, হিংসা বা অন্যের জন্য বাঁচার কালচার থেকে মুক্তি পাওয়া ছিল বেশ কঠিন ব্যপার। আলহামদুলিল্লাহ, এই কমিউনিটিতে এসেই আমার স্ত্রী দ্বীন পালনের কিছু বাস্তব উদাহরণ দেখেতে পায়, যা তাকে দ্বীনের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে। সবকিছু ১০০% না হলেও যা পাওয়া গে‍লো তা বলতে গেলে বাংলাদেশে অপ্রতুল। কারণ মর্ডানিজম, নারীবাদ বা বিপ্লবী চেতনা দ্বীনি মহিলা কমিউনিটিকেও এমনভাবে আক্রান্ত করেছে যে, আজকাল খাদিজা, আয়ে‍শা বা ফাতেমা হওয়ার দৌড়ে কাওকে খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল। অনেক স্থানে আবার যুক্ত হয়ে আছে বিদাত বা চরমপন্থার কালো ছায়া। যাহোক এ কমিউনিটিতে যতটুকু আছে, তা আল্লাহর এক বিশেষ নিয়ামাতই বলা যায়, এবং এ পরিবেশ নিয়ে আরও কাজ করার এবং এগিয়ে নিয়ে যাবার সুযোগ আছে। আসলে ভাল একটা দ্বীনি পরিবেশ সংসারের অনেক সমস্যা মিটিয়ে দিতে পারে, অনেক অশান্তির প্রতিরোধক হতে পারে অথবা অনেক বিপদ থেকে মুক্তিরও কারণ হতে পারে- যা হয়ত টাকা-পয়সা দিয়ে পাওয়া সম্ভব নয়। কতৃত্ব দিয়ে হয়ত বাহ্যিক পরিবর্তন সম্ভব হতে পারে, কিন্তু চিন্তা চেতনা বা ধ্যান ধারণা পরিবর্তনে পরিবেশ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

পাশাপাশি মহিলাদের দ্বীনি প্রয়োজনটাকে বিশেষভাবে ফোকাস করার জন্য এই কমিউনিটিতে শুরু হয়েছে বিশে‍ষ হালাকা, যেখানে দ্বীন শিক্ষার পাশাপাশি পারস্পারিক যোগাযোগ, হৃদ্যতা বা সহযোগীতার সুযোগকে সম্প্রসারিত করে। সবকিছু মিলিয়ে পরিবারকে দ্বীনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য বা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য একটা ভাল দ্বীনি কমিউনিটির ভুমিকা সুদূরপ্রসারী, যা হয়ত এখানে না আসলে এতটা বুঝতে পারতাম কি না আল্লাহই ভাল জানেনে।

৩. অনেকগুলি আয়না: সুনানে আবু দাউদে এসেছে “মুমিন মুমিনের আয়না স্বরূপ” (হাসান)।

এই কমিউনিটির অধিকাংশ দ্বীনি ভাই যেন এক একটি আয়না, যা দেখে কখনও অনুপ্রাণিত হই, কখনও লজ্জা পাই কখনও প্রশান্তিও লাভ করি।

এমন কিছু ভাইকে দেখি যাদের সাধারণত তাহাজ্জুদ বাদ যায় না এবং কারও কারও নফল সিয়াম সাধারণত বাদ যায় না। উনাদেরকে যতবার দেখি লজ্জা পাই, ভাবি এখনও কত পথ পাড়ি দিতে বাকি।

কিছু ভাইদের দেখি রিযিকের পেরেশানি থেকে মুক্ত এবং আল্লাহর উপর কি অসাধারণ তাওয়ক্কুল, কোনভাবেই সন্দেহযুক্ত উপার্জনের দিকে পা বাড়াবেন না। অতি সাধারণ জীবন যাপন তাই কত অল্পতেই তুষ্ট তারা। কিছু ভাই আছেন যাদের হাতদুটি এতই প্রসস্ত যে, অর্ধকোটি টাকার উপরে শুধু কর্জে হাসানাই দিয়ে রেখেছেন বিভিন্ন দ্বীনি ভাইদেরকে। উনাদের দেখে অনুপ্রাণিত হই।

কুরআনুল কারীমে এসেছে- “তুমি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখ, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে থাকে….” [সুরা কাহাফ:২৮]

সর্বপরি, বিভিন্ন গুনে গুণান্বিত দ্বীনি ভাইদের সাথে যখন সালাতের পরে, হালাকাতে বা স্কুলে যখন দেখা হয় তখন কেমন যেন এক প্রশান্তি অনুভব হয়, নিজের পিছিয়ে থাকা বিষয়গুলো শক্তভাবে স্বরণে আসে, ভাল কাজের প্রতিযোগীতা করতে ইচ্ছা জাগে। যা সত্যিই দ্বীনের পথে এগিয়ে যাবার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।

৪. শয়তানকে পরাজিত করার সক্রিয়তা:

আমরা যখন কর্মক্ষেত্র বা বিভিন্ন আত্মীয়দের সাথে সামাজিকতায় লিপ্ত হই তখন বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী বা আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হতে পারে এমন কর্মকান্ডের বা এর ফিতনার সম্মুখিন হই। তখন আমরা সংখ্যালঘু হয়ে শয়তানের ফেলা ফাঁদে আটকে যাই এবং যে কাজগুলো হাত/মুখ/অন্তর দিয়ে বাধা দেয়া বা ঘৃনা করাই ছিল আমাদের কর্তব্য সেকাজগুলোর সাথে কোন না কোন ফর্মে নিজেদের জড়িয়ে ফেলি, তারপর অনেক সময় সেটাকে জায়েজ করার জন্য ফতও‍য়া শপিং করি, না হলে নিজেই মুফতি হয়ে যাই। দিন শেষে কোন না কোন ফর্মে জুলুমের পরিণতি ভোগ করতে হয় আমাদের। [সুরা আছরে এ ব্যাপারে বেশ পরিস্কার ভাবেই বলে হয়েছে]

যেমন জন্মদিন/পহেলা বৈশাখ পালন বা বিশ্বকাপ উপভোগের উদাহরণ যদি ধরে নেই – যখন কর্মক্ষেত্রে বা প্রতিবেশীদের মাঝে দেখি সবাই কেক কাটায় বা বিশ্বকাপের উত্তেজনায় শামিল হচ্ছে তখনও হয়ত কিছুটা প্রতিরোধ মনের ভিতরে কাজ করে। কিন্তু এর পর যখন একজন সাধারণ টুপি-দাড়ি ওয়ালা ভাইটাও তাতে শামিল হয়, তখন নিজেকে বড্ড একা একা লাগে, মনে হয় ফতওয়াটা পূনরায় মুল্যায়ন করা দরকার। এরপর হয়ত যখন বস বা কাছের কোন আত্মীয় আবার আহবান করে তখন হয়ত মনে হয়,….”আরে কেক কাটার পাশে একটু দাড়ালে কি হয়, আমি তো আর কেক কাটছি না”, অথবা মনে হয় “আমি মুখে HBD নাই বা বললাম, অথবা মনে হয় কেক তো আর pork নয় যে খাওয়া হারাম হবে” ইত্যাদী ইত্যাদী। এরপর যা হবার তাই হয়, যে কাজটা মুমিন বান্দাটির হাত দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া উচিৎ ছিল, সেই কাজে সে নিজেই শরিক হয়ে যায়। শয়তান যদি আরও একধাপ অগ্রগামী হতে পারে তাহলে মনে হয়,…..”আরে আইসিডির শুক্রবারের হালাকা বেশি কট্টর, ওখানে যাওয়া ঠিক হবে না, ইসলাম এতো কঠিন নাকি”। (কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ থেকে বললাম)। কিন্তু কমিউনিটিতে আসার পর আর নিজেকে একা মনে হয়নি; কমিউনিটি থেকে পাওয়া ভাইদের অনুপ্রেরণা ও উদাহরণ এবং হালাকাগুলো থেকে সঞ্চয় করা শক্তিটা কর্মক্ষেত্রের সংখ্যাগরিষ্ট (৯৯% হলেও) সেকুলারদের প্রথা বা নীতিটাকে চ্যলেন্জ করাবার, তাদের আহবানকে বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান করবার এবং তাদেরকে দাওয়াতে শামিল করবার সামর্থ যোগায়। সুযোগ তৈরি করে দেয় সেই ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত না হতে, যাদের কথা সুরা আছরে বলা হয়েছে।

এভাবেই এই দ্বীনি কমিনউনিটি থেকে সঞ্চয় করা ঈমানী শক্তিটা কর্মক্ষেত্র বা অন‍্যান্য সেকুলার পরিবেশেও একটা প্রতিরক্ষা হিসাবে কাজ করে এবং শয়তান ও অবিশ্বাসীদের ফাঁদ থেকে নিজকে এবং পরিবারকে হিফাজত করা তথা জাহান্নামের আগুন থেকে নিজের আহলকে রক্ষা করতে অসাধারণ ভুমিকা রাখে। নিচের এই হাদীসটি এব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক-

উমার (রাঃ) জাবিয়াতে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) এই জায়গায় আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছেনঃ
“আমার সাহাবীদের জন্য সব সময় শুভ কামনা কর, তারপর তাদের পরবর্তীদের জন্য, তারপর তাদের পরবর্তীদের জন্য। এরপর মিথ্যা ছড়িয়ে পড়বে, এমনকি এমনও ঘটবে যে, কোন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করার আগেই সে সাক্ষ্য দিতে শুরু করবে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জান্নাতের মাঝখানে থাকতে ইচ্ছুক, সে যেন অবশ্যই জামাতবদ্ধ জীবন যাপন করে। কেননা শয়তান একাকী মানুষের সঙ্গী এবং দু’জন থেকে সে অপেক্ষাকৃত দূরে থাকে।….” [মুসনাদে আহমাদ, সনদ সহীহ]

৫. হালাকা: কমিউনিটি থাকার একটা বড় সুবিধা হলো আইসিডির সাপ্তিহিক হালাকাগুলোতে অংশগ্রহন সহজ হয়। কারণ হালাকায় আসার সময়ই শয়তান সবচেয়ে বেশি বাধা দেয়, বিভিন্ন ধরনের কাজ ও সমস্যা নিয়ে এসে হাজির করে। কোথাও বেড়াতে যাবার সময় যা সাধারণত হয় না। কিন্তু হালকাগুলো শুধু দ্বীন শিক্ষার উপকরণই নয় বরং তা আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির এক বড় সুযোগ।

কদিন আগে ড: সাইফুল্লাহ নিচের হাদীসটি এব্যাপারে উল্লেখ করেছিলেন
“যে লোক জ্ঞানার্জন করার জন্য বের হয় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের মাঝে) আছে বলে গণ্য হয়”। (ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)

যিকিরের মজলিশের ফজিলতের ব্যপারে সহীহ বুখারী মুসলিমের হাদীসটি হয়ত আমরা সবাই জানি তবুও বড় হাদীসটির শেষাংশটি যদি আবার একটু লক্ষ করি-
“……তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম।’ ফেরেশতাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।” (বুখারী-মুসলিম)

৬. অন্যান্য উদ্যোগ: এছাড়াও এই কমিউনিটির দ্বীনি ভাইদের ছোট ছোট বিভিন্ন উদ্যোগ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যানে ভুমিকা রাখে – সকালের ফজরের সলাতের পর কিছু ভায়েরা একসাথে শরীরচর্চার জন্য হাটেন বা সাইক্লিং করেন, মাঠে ছোট পরিসারে মাঝে মাঝে খেলার আয়োজন হয়, প্রতি ওয়াক্ত সলাতের পর ছোট্ট আকারে দ্বীনি/দুনিয়াবী আড্ডা হয়, যেগুলো ভাইদের মধ্যে হৃদ্যতার সুযোগ সৃষ্টি করে। ভালই লাগে যখন দেখি, এক দ্বীনি ভায়ের সন্তানকে আরেক দ্বীনি ভাই স্কুলে নিয়ে যাচ্ছেন বা নিয়ে আসছেন, ডাক্তার দেখানোর সময় সন্তানকে আরেক ভাইয়ের বাসায় রেখে যাচ্ছেন, কোন ভাই হজ্জে গেলে তার পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছেন, কোন ভাই বিপদে পড়লে অনেকেই এগিয়ে আসছেন ইত্যাদী ইত্যাদী….। তবু দ্বীনি ভাতৃত্বকে আরও এগিয়ে যাবার যথেষ্ট সুযোগ আছে এবং তা কমিউনিটির ভাইবোনদেরই দ্বায়িত্ব।

পরিশেষে, বলবো একটি কমিউনিটি থেকে প্রাপ্তি হয়ত সবার সমান হয়না এবং তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্ভর করে তার engagement উপর। আর লবণ ছাড়া যেমন তরকারী হয়না, তেমনি প্রতিটি কমিউনিটি এবং তার মানুষদের কিছু improvement scope থাকবে। তবে সকলের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি একটি কমিউনিটি থেকে সর্বোচ্চ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে।একটি গল্প শুনেছিলাম, “একজন শিক্ষক একটি সাদা কাগজে একটি ছোট্ট বৃত্ত এঁকে ছাত্রদের বলল….কি দেখছো? সবাই উত্তর দিল কাল বৃত্ত। কিন্তু একজন ছাত্র বলল সে দেখছে একটি সাদা কাগজ। শিক্ষক তাকে কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। ছাত্রটি বলল, এখানে বেশিরভাগ অংশই তো সাদা, আমি কেন কালো বৃত্তটির কথা বলবো?….”

আসলে কমিউনিটি মানে একজন ব্যাক্তি নয়, সবাইকে নিয়েই তৈরি হয় কমিউনিটি। সকলের আচরণেই প্রস্ফুটিত একটি কমিউনিটির বৈশিষ্ট।কিন্তু সামষ্ঠিকতায় আসে বারাকাহ। কর্পোরেট জগতে একটা শব্দ বেশ ব্যবহার হয় – ‘Synergy’ মানে ২+২ সমান ৪ নয় বরং যখন synergy তৈরি হয় তখন ২+২ এ ৫ হয়। দ্বীনি কমিউনিটিতে এর বাস্তব উদাহরণ আমি দেখতে পাই। ধরুন, আপানার ছে‍লে একটা ভাল কিছু অর্জন করেছে, এখন আপনি সেকুলার পরিবেশে থাকলে এই খবরটি হয়ত আরেকজনের হিংসার কারণ হতে পারে, যা আপনার সন্তানকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। আর দ্বীনি কমিউনিটিতে এই খবরটি আরেকজন দ্বীনি ভাই শুনে যদি তিনি আপনার পিছনে আপনার সন্তানের মঙ্গলের জন্য দোয়া করেন তাহলে তা থেকে আপনি বা আপনার সন্তান যেমন উপকৃত হতে পারেন তেমনি সেই ভাইটির জন্যও ফেরেস্তারা একই দোয়া করতে থাকেন (সহীহ মুসলিম:৪৯১২) যা থেকে ওই ভাইটিও একই রকম উপকৃত হতে পারেন। যা সবার জন্যই সমগ্রীক কল্যান বয়ে আনতে পারে।

পরিশেষে একটি ছোট্ট হাদীস (কুদসী)-

‘আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আমার ভালবাসা তাদের জন্য অবধারিত, যারা আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পরস্পরকে ভালবাসে, আমার উদ্দেশ্যে সমাবেশে মিলিত হয়, আমার উদ্দেশ্যে পরস্পরে সাক্ষাৎ করে এবং আমার উদ্দেশ্যেই নিজেদের মাল-সম্পদ ব্যয় করে [আহমাদ, আলবানী রাহি: সহীহ বলেছেন]

Leave a Comment