সাধারণভাবে আমি কোন কিছু যাচাই বাছাই ছাড়া গ্রহন করি না সেটা দুনিয়াবী বিষয় হোক বা দ্বীনের বিষয় হোক। আমি চেষ্টা করি আমার সাধ্যমত বিভিন্ন ডাইমেনশনে সব বিষয়ের যাচাই বাছাই করা কোন কিছু নিজে গ্রহন বা অন্য কাউকে রিকমেন্ড করার পূর্বে।

যা হোক যে বিষয়ে বলতে চাইছি সেটা সংক্ষেপে বলি। আমার মায়ের ডায়াবেটিক প্রায় ২৫ বছর এবং উনার ডায়াবেটিক সম্পূর্ণ অনিয়ন্ত্রিত এবং উনাকে নিয়মিত ৩ বেলা ইনসুলিন নিতে হত দুই ধরনের ইনসুলিন একসাথে মিক্স করে। ঢাকাতে বহু হাসপাতালে আমাকে যেতে হয়েছে আমার মায়ের এই ডায়াবেটিকের কারনে কেননা এই একটি অসুখের কারনে উনার হার্ট, কিডনী, চোখ ইত্যাদি সবই মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত।

গত মাসে (সেপ্টেম্বর ২০১৮) অবশেষে আমার নিজের ডায়াবেটিক ধরা পড়ে, আলহামদুলিল্লাহ্‌ যদিও এই বয়সে (৪৯) আল্লাহ আমাকে অনেক রোগ বালাই থেকেই মুক্ত রেখেছেন। যখন আমার ডায়াবেটিক ধরা পড়ে তখন পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, স্বাভাবিকের থেকে ৩ গুনের বেশি কোলেস্টরেল রক্তে Triglyceride 479mg/dL এবং ডায়াবেটিক। খাবার আগে ১৩.১ আর খাবার পরে ২০ এই ছিল আমার ডায়াবেটিকের মাত্রা যখন ধরা পড়ে এই রোগ।

বর্তমানে আমি ডায়াবেটিক সমিতির একজন রেজিস্টার্ড রোগী। এটি ধরা পড়ার পর থেকেই আমি এবং আমার স্ত্রী মিলে মূলত বিভিন্ন ভাবে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করি ইন্টারনেটে ইউটিউবে, বিভিন্ন মেডিক্যাল আর্টিকেল সাইটে এবং বিভিন্ন ডায়াবেটিক রোগীদের সাথেও কথা বলা শুরু করলাম। অনেক কিছুই পেলাম তবে তাতে খুব ভালো কাজের এমন কিছু পেলাম না।

একদিন উত্তরার Taq’wa Books এ বই গোছানোর সময় পেলাম একটি কৌটা জরাজীর্ণ অবস্থায় এবং প্রথমে এটি আমি ফেলেই দিতে যাচ্ছিলাম, তবে ফেলার আগে একটু পড়ে দেখতে চাইলাম এতে কি আছে আর এর বর্ণনা কি। লক্ষ্য করলাম এর গায়ে ডায়াবেটিক এবং কোলেস্টরেল ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বলা হয়েছে। তখন আমি ওটি ফেলে না দিয়ে বাসায় নিয়ে আসলাম পরীক্ষা করার জন্য, কেননা আমার যেহেতু এই দুইটা (ডায়াবেটিক এবং কোলেস্টরেল) সমস্যায় আছে তাহলে নিজের উপর আগে পরীক্ষা করে দেখি না কেন।

এরপর বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলাম পরীক্ষা। প্রথমে এটি খাবার আগে সুগারের লেভেল মেপে লিখে রাখলাম এরপর এটি অল্প মাত্রায় পানির সাথে গুলিয়ে খেলাম বেশ ভয়ে ভয়ে, কি জানি কি হয় আবার! এরপর স্বাভাবিক ডায়াবেটিক রোগীর খাবার খেলাম এবং ২ ঘণ্টা পর আবার সুগার লেভেল মাপলাম। মনে হল যে এটাতে কাজ হচ্ছে। এরপর আমি আরো প্রায় ১০-১২ দিন এভাবে নিয়মিত কখনো আমার নিয়মিত ওষুধ + মেথির গুড়া, আবার কখনো শুধু মেথির গুঁড়া সকালে এবং রাতে খেতে লাগলাম। আর আমি সব সময় রেজাল্ট মেপে লিখে রাখতাম এবং কি কি খেয়েছিলাম ইত্যাদি সেগুলিও লিখে রাখতাম রেজাল্টের পাশাপাশি, আর এর জন্য এক মাসে প্রায় ৩৫টা স্ট্রিপ শেষ হল।

রেজাল্ট যা পেলাম তাতে মনে হল যে এটা কাজ করছে, এরপর একদিন দুপরের খাবারের পর সাহস করে ২ টি বড় মিষ্টি খেয়ে ফেললাম এবং খাবার পরপর সাথে সাথে ২ চামচ মেথির গুঁড়া পানির সাথে মিশিয়ে খেয়ে ফেললাম। এরপর কোন ধরনের হাঁটাহাঁটি না করে সোজা ঘুম। ২ ঘন্টা পর উঠে ভয়ে ভয়ে সুগার মাপলাম, এবং আলহামদুল্লাহ লেভেল ৬.৯!

আমার এই নিশ্চিত রেজাল্ট পাবার পর এবার আমি এটি আমার মায়ের উপর প্রয়োগ করার উদ্যোগ নিলাম। আমার মা মূলত ইনসুলিন নির্ভর এবং অনেক সময়ই তার সুগার মাত্রার নিচে নেমে যেত আর তখন হত এক ভয়াবহ অবস্থা। তাড়াতাড়ি তাকে আবার মিষ্টি জাতিয় কিছু খাইয়ে এরপর সুগার লেভেল বাড়াতে হত। এক কথায় তার ডায়াবেটিক ভয়াবহ মাত্রার এবং অনেক সময় লেভেল এত বাড়ত যে মেশিন রিডিং দিতে পারত না ঠিক মত।

আমি তাকে বললাম যে ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে সাথে মেথি খাবার জন্য, তিনি মেথি গুড়ার বদলে অবশ্য আস্ত পানি দিয়ে গিলে ফেলেন। এরপর কয়েকদিন পর ইনসুলিন বন্ধ করে মেথির পরিমান বাড়িয়ে দিয়ে কি হয় সেটা দেখতে। আলহামদুলিল্লাহ্‌, ১০-১২ দিন এভাবে ইনসুলিন বন্ধ করে শুধু মেথি খেয়ে তিনি সম্পূর্ণ ভালো অবস্থায় এবং পাশাপাশি তার অন্য যে সমস্ত সমস্যা ছিল সেগুলি কমে গেল।

এবার আমি আরো বেশি নিশ্চিত হলাম যে এটি আসলেই কাজ করে ইনসুলিনের বিকল্প হিসাবে। কিন্তু কিভাবে সঠিক মাত্রায় কাজ করে এটি বের করার জন্য আমাকে আরো অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে হয়েছে এবং আমার নিরিক্ষার ফলাফল নিম্নে উল্লেখ করলাম।

১/ আমি অনেকে ডায়াবেটিক রোগীর কাছেই শুনেছি যে তারা মেথি ভেজানো পানি খান কিন্তু তেমন কোন কাজ হয়নি। আমিও নিশ্চিত যে মেথি ভেজানো পানি খেলে তেমন বেশি কাজ হয় না, অল্প কাজ হয় অবশ্য।

২/ মেথির পাওডার বা আস্ত মেথি খেতে হবে ঠিক খাবারের পরপর, খাবারের পর ৫-৭ মিনিট দেরী করা যাবে না কেননা তাতে খাবারের বা মিষ্টির সুগার আপনার ভিতরে গিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেবার কাজ শুরু করে দেয়, আর খাবারের পর পর খেলে খাবারের/মিস্টির সুগার ভিতরে গিয়ে আর তার কাজ করার সুযোগ পায় না বরং মেথি সুগার বাড়ার কাজকে প্রথমেই প্রতিহত করে ফেলে।

৩/ মেথি খালি পেটে খাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না কেননা সুগার বাড়া শুরু হয় মূলত খাবারের পর থেকেই।

৩/ ডায়াবেটিকের মাত্রা অনুসারে মেথির পরিমান নির্ধারণ করতে হবে। আমি মূলত সকালে এবং রাতে খাই ঠিক খাবারের পর পর, খালি পেটে খায় না। আমার বর্তমান এভারেজ ৬.৫ – ৬.৯ খাবারের আগে।

৪/ যদি মিষ্টি খান তাহলে মেথির পরিমান বাড়াতে হবে, যেমন আমি নিজে সাধারণ খাবারের পর ১ চা চামচ (উঁচু করে নয়) পাউডার গ্রহন করি কিন্তু মিষ্টি খেলে সেখানে আরেক চামচ বেশি নিতে হয়। তবে যাদের ডায়াবেটিকের মাত্রা বেশি বা নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয় তাদের মাত্রা আরো বাড়াতে হবে আর এর জন্য প্রতিবার মেথি খাবার ২ ঘন্টা পর সুগার লেভেল মেপে লিখে রেখে প্রয়োজন মত মেথির মাত্রা এডজাস্ট করতে হবে প্রথমে। প্রথম কিছু দিন এই মাত্রা নির্ধারণের জন্য একটু কষ্ট করতে হবে কেননা কোন সময় আপনার ডায়াবেটিক অন্য সময়ের তুলনায় বেশি বা কম হয়ে যেতে পারে।

এরপর আমি যে যে উপকার পেয়েছি সেটা নিম্নরূপঃ
==============================

১/ ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রনে এবং আমি এখন আর কোন ডায়াবেটিকের ঔষধ খায় না। সাধারণ ভাবে আমাকে গ্লুকোমেট-৮৫০ এবং ডায়াট্রল খেতে হত সকালে এবং রাতে। আর কোলেস্টরেলের জন্য আমাকে খেতে হত Nofiute 200 (৬ মাসের কোর্স দিয়েছিল ডাক্তার) আর সাথে ডাক্তার দিয়েছিল খাওয়া যাবে না এমন খাবারের বিশাল বড় এক তালিকা। এগুলির নির্দেশনা পেয়ে দুনিয়াটা আমার কাছে তখন বেশ সংকীর্ণ মনে হচ্ছিল!

২/ আলহামদুলিল্লাহ্‌ বর্তমানে আমার রক্তের কোলেস্টরেল একদম স্বাভাবিক Triglyceride 88mg/dL।

৩/ এসিডিটির (পেটে গ্যাস) জন্য নিয়মিত প্রবিটর ২০ খেতে হত এখন কিছুই খাওয়া লাগে না।

বাকি কি কি উপকার হয় সেটা এখনি বলা সম্ভব হচ্ছে না কেননা টেস্ট করি নাই অন্য বিষয়ে তবে এর আরো অনেক উপকারিতা আছে এটা নিশ্চিত।

আজ এই পর্যন্তই, আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষতিকর রোগ বালাই থেকে মুক্ত রাখুন, আমীন।

 

সূত্রঃ বাংলা হাদিস  (আইসিডি এর ইমেইলের মাধ্যমে প্রাপ্ত)

 

Leave a Comment